1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার কী কাজে আসবে?

১১ নভেম্বর ২০২২

আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে৷ সাত কিস্তির এই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে৷ এই ঋণ বাংলাদেশের কী কাজে আসবে? সুবিধা বা অসুবিধার দিকই বা কী?

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় খরচ বেড়ে চলায় ক্রমশ রিজার্ভের পরিমাণ কমছে
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় খরচ বেড়ে চলায় ক্রমশ রিজার্ভের পরিমাণ কমছেছবি: Yuri Gripas/REUTERS

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৪ দশমিক সাত কোটি মার্কিন ডলার দিবে আইএমএফ৷২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো অর্থ দিবে তারা৷ এই ঋণের ১০০ কোটি ডলার পাওয়া যাচ্ছে বিনা সুদে৷ বাকি ঋণের ওপর সুদের হার শতকরা দুই দশমিক দুই শতাংশ করে৷

ঋণের ১৩০ কোটি ডলার জলবায়ু অভিঘাতজনিত সমস্যা নিরসনে আর ৩২০ কোটি ডলার বজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে৷

ঋণের জন্য প্রধান শর্তগুলো হলো: ১. আর্থিক খাতের সংস্কার ২. রাজস্ব সংস্কার ও প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি ৩. আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং ৪. ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়৷

কী কাজে আসবে এই ঋণ

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটে রয়েছে৷ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় খরচ বেড়ে চলায় ক্রমশ রিজার্ভের পরিমাণ কমছে৷সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘এই ঋণের ফলে ডলার সংকট বিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো যাবে৷ তাই এই অর্থনৈতিক অবস্থায় এটা কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর৷ আর ঋণ আমাদের লাগতোই৷ আইএমএফের ঋণ পাওয়ায় এখন বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপান বা অন্য কোনো জায়গা থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হয়ে গেল৷ তারা আর প্রশ্ন করবে না৷''

‘‘বাংলাদেশের ঋণ বাড়ছে''

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও মনে করেন, এই ঋণ বিছুটা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করায় ভূমিকা রাখবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আরো তো ঋণ লাগবে৷ সেক্ষেত্রে আইএমএফ যেহেতু যাচাই বাছাই করেই ঋণ দিচ্ছে তাই অন্যদের আর সেটার প্রয়োজন হবে না৷'' এর ফলে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ও ভাবমূর্তি দুটোই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন তিনি৷ তবে তার মতে, ‘‘এটা কোনো বড় ঋণ নয়৷ চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ডলার ও রিজার্ভের সংকট তেমন কাটবে না৷ এরজন্য রপ্তানি বাড়াতে হবে৷ রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে৷''

শর্ত মানা কি সহজ?

আইএমএফ যে শর্তগুলো দিয়েছে তাবাংলাদেশের পক্ষে মানা অসম্ভব নয়বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা৷ তাদের মতে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার, রাজস্ব খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক সংস্কার, খেলাপি ঋণ কমানো-এগুলো দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন৷ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘তবে খেয়াল রাখতে হবে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি কমালে যেন ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়ে না যায়৷ প্রয়োজনে বিকল্প ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে৷ এজন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা নিতে হবে৷'' 

তার মতে, ‘‘খেলাপি ঋণ নিয়ে সরকার সমস্যায় পড়তে পারে৷ কারণ এটার ভিতরে রাজনীতি আছে৷ আর ব্যাংকের পরিচালকরাই নামে বেনামে এই ঋণ নিয়েছেন৷''

আইএমএফ একবারে ঋণ দেবে না৷ তারা আসবে, দেখবে যে তাদের শর্ত বাস্তবায়ন হচেছ কী না৷ তাই ঋণের কিস্তিগুলো অব্যাহত রাখতে হলে বাংলাদেশকে শর্ত পূরণ করতে হবে বলে জানান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওদের শর্ত পালন করে সংস্কার করলে আমাদের অর্থনীতিই ভালো হবে৷ সেটা না করলে আমাদের ইমেজ খারাপ হয়ে যাবে৷''

‘‘এই অর্থনৈতিক অবস্থায় ঋণ কিছুটা হলেও স্বস্তি''

This browser does not support the audio element.

ঋণের ব্যবহার

ঋণের ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এই ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এবং শর্ত না মানলে কিস্তি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ তবে সরকারের হাতে সময় আছে৷ চাইলে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করতে পারবে৷ গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘অতীতে বাইরে থেকে ঋণ নিয়ে নয়ছয় হয়েছে৷ জলবায়ু ফান্ডের টাকা ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন আছে৷ এবার দেশের যা অবস্থা একটি ডলারও নয়ছয় করার সুযোগ নেই৷ জলবায়ুর জন্য এক বিলিয়ন ডলারের বেশি দেয়া হচ্ছে তাও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে৷''

দুর্নীতি কমানোর উপরও জোর দেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘ঋণের অর্থ ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারলে তো কিছুই হবে না৷ জলবায়ু খাতে যে অর্থ দিচ্ছে তা যদি আগের নয়ছয় হয় তাহলো তো আরো বিপদে পড়ব আমরা৷''

ঋণের বোঝা আরো বাড়বে

আগামী বছর শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে৷ আর ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে৷

২০২১ সালে সুদসহ দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার৷ গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাংলাদেশকে দ্বিগুণ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে৷ ২০২২ সাল শেষে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ঠেকবে ২৩ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারে৷ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ‘‘জিডিপি ঋণ অনুপাতে বাংলাদেশ এখানো ঝুঁকির মধ্যে নেই৷ আইএমএফের এই ঋণ পরিশোধে ২০-৩০ বছর সময় পাওয়া যাবে৷ সুদের হারও অনেক কম৷ তাই যদি ঋণ ভালোভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে বরং অর্থনীতির জন্য ভালো হবে৷''

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ঋণ ঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করে না৷ যদি সেটা না হয়, তাহলে নতুন বোঝা হিসেবে দেখা দেয়৷ বাংলাদেশের ঋণ বাড়ছে৷ এই ঋণ তো শোধ করতে হবে৷ তাই আমাদের সতর্ক না হয়ে উপায় নেই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ