1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জায়েদা খাতুনের জয়ে জাহাঙ্গীর ও আটটি বিষয়ের ভূমিকা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ মে ২০২৩

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের বিজয়ে গাজীপুর মহানগরের বাইরের লোক বিস্মিত হলেও ওই এলাকার মানুষ বিস্মিত নন৷

গাজীপুরের প্রথম নারী মেয়র হতে যাচ্ছেন জায়েদা খাতুন৷
জায়েদা খাতুনের বিজয়ে গাজীপুর মহানগরের বাইরের লোক বিস্মিত হলেও ওই এলাকার মানুষ বিস্মিত নন৷ছবি: Samir Kumar Dey/DW

নির্বাচন সুষ্ঠু হলে যে জায়েদা খাতুন জয়ী হবেন- এ বিষয়ে তাদের অনেকেই নিশ্চিত ছিলেন৷ আর সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ায় সেই ফলই এসেছে৷ তবে জায়েদা খাতুনকে নয়, ভোটাররা আসলে পরোক্ষভাবে ভোট দিয়েছেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে৷

জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হন৷ তাকে মেয়র পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়৷ নির্বাচনের আগে দলে ফিরিয়ে নেয়া হলেও তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন৷ তখন তাকে দল থেকে আবার স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয়৷ কিন্তু ঋণখেলাপী হওয়ার কারণে তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়৷ জাহাঙ্গীর হয়তো প্রার্থিতা যে বাতিল হবে তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন৷ তাই তার মা জায়েদা খাতুনকেও প্রার্থী করেন এবং তার প্রার্থীতা টিকে যায়৷ শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে তিনিই এখন গাজীপুরের মেয়র৷

গাজীপুরের বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পরাজয় এবং জাঙ্গীরের মায়ের জয় সম্পর্কে নানা ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে৷ তারা বলছেন:

১. আওয়ামী লীগ জাহঙ্গীরকে বহিস্কার করলেও গাজীপুরের তৃণমুলে তার অবস্থান কখনোই দুর্বল হয়নি৷ তার তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ সব সময়ই ছিল৷ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা কালেই তিনি তার এই শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷

২. আজমত উল্লা খান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও প্রথম সিটি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে তৃণমূলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না৷ তাছাড়া তিনি মহানগরের আট থানায় যে কমিটি দিয়েছেন, তা ‘পকেট কমিটি' নামে পরিচিত৷ তৃণমূলের সাথে তাদেরও যোগাযোগ নেই৷

৩. এবার মনোনয়নের ব্যাপারেও আজমত উল্লা নিশ্চিত ছিলেন না৷ ফলে তার প্রস্তুতিও তেমন ছিল না৷ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাহাঙ্গীরের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি মনোনয়ন পাবেন৷ জাহাঙ্গীরও প্রস্তুত ছিলেন৷

৪. গাজীপুর আওয়ামী লীগ তিন ধারায় বিভক্ত৷ আজমত উল্লা তার একটি ধারার নেতৃত্ব দেন৷ জাহাঙ্গীর কোনো ধারার সাথে না থেকে আজমতবিরোধী ধারাগুলোর সমর্থন নেন৷

৫. জাহাঙ্গীর এক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতার আশীর্বাদপুষ্ট৷ এর আগে ওই নেতাই জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদে মনোনয়ন পাইয়ে দিয়েছিলেন৷ দল থেকে জাহাঙ্গীর বহিস্কার হলেও ওই নেতার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হননি তিনি৷

৬. বিএনপির মেয়র পদে প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনের খেলা জাহাঙ্গীরের পক্ষে চলে যায়৷ বিএনপির ভোটও তার মায়ের দিকে আসে৷

৭. জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া, নির্বাচনের আগে দুদকের তৎপরতা, গাড়িতে হামলা- সব মিলিয়ে তার ওপর সরকারে চাপ তাকে ভোটারদের সহানুভূতি পেতে সহায়তা করে৷ এর সুফল পেয়েছেন তার মা৷

৮. আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যসব দলের নেতাদের সঙ্গে জাহাঙ্গীর সুসম্পর্ক রেখে চলেন৷

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তার এত জনপ্রিয়তা- এই প্রশ্নের জবাবে কেউ কেউ বলেছেন দুর্নীতি করে থাকলেও সাবেক মেয়র তাদের পাশে দাঁড়ান আর সে কারণে সাধারণ মানুষও তার পাশে থাকে৷

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওসমান আলীর সঙ্গে৷ তিনি বলেন, ‘‘গাজীপুরের স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের মায়ের জন্য কাজ করেছে৷ তারা আসলে জাহাঙ্গীর দল থেকে বহিস্কার হলেও জাহাঙ্গীরের সঙ্গ কখনো ত্যাগ করেনি৷ এরকম নেতাদের চিহ্নিত করে আগে আমরা বহিস্কারের সুপারিশ করলেও তাদের বহিস্কার করা হয়নি৷’’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের মায়ের জন্য কাজ করেছে: ওসমান আলী

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘জাহাঙ্গীরের মা আওয়ামী লীগের অনেক ভোট পেয়েছেন৷ এছাড়া জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিএনপি, জামায়াতসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ আছে৷ সব সময়ই সে এই যোগাযোগ রাখতো৷ তাদের দিক থেকেও ভোট পেয়ছে৷’’

তার কথা, ‘‘আজমত উল্লা খান একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ৷ তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ তিনি হেরে যাওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি৷ মহানগরের নেতারা আমরা তার সঙ্গেই ছিলাম৷ কিন্তু সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়৷ জাহাঙ্গীরের অনেক টাকা৷ ঢাকার কাছে অনেকে বিক্রি হয়ে গেছেন৷’’

আর গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাছান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘‘যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে দাঁড়াবে সে-ই পাস করবে৷ গাজীপুরে তাই হয়েছে৷ জায়েদা খাতুন আগে রাজনীতি করেননি৷ তার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই৷ তার পরিচয় তিনি আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মা৷ আয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে তাকেই ভোট দিয়েছেন ভোটাররা৷’’

আজমত উল্লাকে গাজীপুরের লোকেরা পছন্দ করেন না: হাছান উদ্দিন সরকার

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে নেই, আমাদের মেয়র প্রার্থী নেই, তাই জাহাঙ্গীরের মা-কে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন৷ আমরা নির্বাচন করলে ভোটারর আমাদের প্রার্থীকেই ভোট দিতেন৷ সেই সুযোগ না পেয়ে তারা আজমত উল্লা ও আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এখানে আরেকটি কথা বলি৷ আজমত উল্লাকে গাজীপুরের লোকরা পছন্দ করেন না৷ আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়েও ভুল করেছে৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘জাহঙ্গীরের মা-কে আওয়ামী লীগের লোকজনই ভোট দিয়েছেন৷ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য বিএনপির কিছু ভোটার ভোট কেন্দ্রে গেছেন৷ তারা আজমত উল্লাকে ভোট দেয়নি৷’’

স্থানীয় সূত্র জানায়, এবার কাউন্সিলর প্রার্থীরা মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি৷ তারা তাদের জয়ের কথা চিন্তা করেই কাজ করেছেন৷ আওয়ামী লীগের যারা কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন তারা মেয়র পদে আজমত উল্লার জন্য কাজ করেননি৷ এটাও জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষে গেছে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ