1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেখানেই ফুটপাত সেখানেই চাঁদাবাজ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ এপ্রিল ২০২২

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের পর আবার আলোচনায় ফুটপাতে চাঁদাবাজি৷ শুরুতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও পরে বাড়াবাড়ির জন্য জন্য ছাত্ররা ফুটপাতের চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন৷

Bangladesch Coronavirus Lockdown Dhaka
ফাইল ফটোছবি: Mortuza Rashed/DW

আর একজন হকার নেতা বলেছেন,"যেখানে ফুটপাত আছে সেখানেই হকার আছে আর সেখানেই চাঁদা আছে, চাঁদাবাজ আছে, লাইনম্যান আছে৷''

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলমেন্ট ২০১৬ সালে ‘দ্য স্টেট অব সিটিজ ২০১৬: ট্রাফিক কনজেশন ইন ঢাকা সিটি-গভর্নেন্স পারসপেক্টিভ' শিরোনামে এক গবেষণায়  বলে যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে বছরে এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়৷ যা ওই সময়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের মোট বাজেটের চেয়ে বেশি ছিলো৷ আর  প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয়  ৬০ কোটি টাকারও বেশি৷

ওই গবেষণায় ঢাকায় তখন মোট হকারের সংখ্যা বলা হয় তিন লাখ৷ আর প্রতি হকারের কাছ থেকে গড়ে তখন প্রতিদিন ১৯২  টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। ওই গবেষক দলের প্রধান ছিলেন ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ৷ তিনি এখন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল স্ট্যাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক৷ তিনি জানান,"হকারদের সংখ্যা আমরা সংবাদ মাধ্যম থেকে নিয়ে পরে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি। আর চাঁদার পরিমাণ জেনেছি সরেজমিন কাজ করে৷ আমরা হকারদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছি৷''

তিনি বলেন,"আমাদের টার্গেট ছিল ফুটপাতের অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা। দেখলাম এর একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে৷ এই চাঁদা রাজনৈতিক লোকজন, পুলিশ ও লাইনম্যানেরা নেয়৷ লাইনম্যানেরা আবার পুলিশের নিয়োগ করা৷ আমরা প্রস্তাব করেছিলাম যে সিটি কর্পোরেশন যদি এটা রেগুলারাইজ করে ট্যাক্স হিসেবে নেয় তাহলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং সরকারের আয় হবে৷”

ওই গবেষণায় বলা হয় ফুটপাতে চার বর্গফুট  জায়গার জন্য মাসে তিন হাজার টাকা চাঁদা নেয়া হয়৷ আর প্রতিটি লাইটের জন্য প্রত্যেকদিন নেয়া হয় ২৫ টাকা করে। মাসে দুই হাজার টাকা৷

আবুল কাসেম

This browser does not support the audio element.

এই গবেষক বলেন নতুন করে কোনো গবেষণা না হলেও পর্যবেক্ষণ বলছে এখন হকার বেড়েছে৷ চাঁদার আকারও বেড়েছে৷ আর আগের অবস্থাই বহাল আছে। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা এবং লাইনম্যারাই এখনো ফুটপাতের চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করে৷

হকার লীগের সভাপতি আবুল কাসেম জানান,"এখন ঢাকা শহরে সাড়ে তিন লাখ হকার আছেন৷ তাদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাাজার টাকা নেয়া হয়। এটা এলাকা এবং আকারের ওপর নির্ভর করে৷ গড়ে কমপক্ষে  ৩০০ টাকা চাঁদা আদায় হয় প্রতিদিন প্রতিজন হকারের কাছ থেকে। আর ঈদের আগের একমাস এই রেট বেড়ে যায়৷''

তার হিসাব সঠিক ধরে নিলে ঢাকায় প্রতিদিন এখন হকারদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয় ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা৷ বছরে  তিন হাজার ৭৮০ কোটি টাকা৷

তিনি জানান, ঢাকার নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় মোট পাঁচ হাজার হকার আছে৷ এখান থেকে প্রতিদিন চাঁদা আসে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। তাই এখানে একদিন দোকান বা ফুটপাথ বন্ধ থাকলে যারা এই চাঁদা নেন তাদের বিরাট ক্ষতি৷

এই চাঁদা কারা নেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কতিপয় পুলিশ, সিটি কর্পোরেশনের লোক এবং স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু রাজনৈতিক নেতা। আর এই টাকা তোলার জন্য লাইনম্যান ও ক্যাশিয়ার আছে৷''

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘লাইনম্যান ও ক্যাশিয়ার ঠিক করে দেয় পুলিশ৷ যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তাদের পরিবর্তন হয়না৷ তাদের কাজ সরকারি চাকরির মত৷''

জানা গেছে একজন লাইনম্যানের অধীনে একটি করে ‘ফুট' থাকে৷ একটি ফুটে সার্বোচ্চ ৩০০ হকার বসতে পারেন। তাদের একটি করে চৌকির জায়গা( দুই হাত বাই চার হাত) বরাদ্দ দেয়া হয়৷ তবে ফুটপাত ছাড়াও সরসরি রাস্তায়ও হকারদের বসতে দেয়া হয়৷ আর আছে ভ্রাম্যমাণ বরাদ্দ৷ 

হকার নেতা মুরশিকল ইসলাম বলেন," এটার বড় সুবিধাভোগী হলো প্রশাসন৷ তারাই এই তাদের লাভের জন্য চাঁদার বিনিময়ে এই ফুটপাত ভাড়া দেয়া টিকিয়ে রেখেছে৷ তবে প্রশাসনের কারা এটা সবাই জানে৷ সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাই না৷ বললে হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷''

আবুল কাসেম বলেন,"ঢাকা শহরে সেখানেই ফুটপাত আছে সেখানেই ফুটপাতে দোকান আছে, চাঁদা আছে৷ চাঁদাবাজ আছে৷ কতিপয় পুলিশ এটার মূল নিয়ন্ত্রক৷ তাই এটা বন্ধ করা সহজ নয়৷ ফুটপাত থাকলে চাঁদাবাজিও থাকবে৷''

তার কথা," নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ নেয়া এবং সঠিক সময়ে পুলিশ না যাওয়ার পিছনে আছে এই ফুটপাতের চাঁদা। কারণ ফুটপাতের দেকান একদিন বন্ধ থকলে যারা চাঁদা দেন তাদের অনেক ক্ষতি। ঈদের আগে তো আরো বেশি ক্ষতি৷''

আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ফুয়াদ হাসান অভিযোগ করেন, ‘‘শুধু ফুটাপাত নয়, স্থায়ী দোকানদারদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। আর সে কারণেই ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করেছে পুলিশ৷''

তকে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমাদের কাছ থেকে সরাসরি চাঁদা নেয়না। আমরা মালিক সমিতির মাধ্যমে নিরাপত্তার জন্য মাসিক ভিত্তিতে একটা খরচ দিই৷''

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও ডিএমপির রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেনকে পাওয়া যায়নি৷ তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি( মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাংলাদেশ পুলিশ মেনে চলে৷ আমাদের বর্তমান আইজিপি মহোদয় দায়িত্ব নেয়ার পর পাঁচটি মূলনীতি ঘোষণা করেন৷ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, বিট পুলিশিং, মানবিক কার্যক্রম এবং ওফেলফেয়ার পুলিশিং নিশ্চিত করা৷ ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলা বা যেকোনো রকম চাঁদাবাজি স্পষ্টতই একটি দুর্নীতি এবং গর্হিত অপরাধ৷ এ ধরনের কোনো অপরাধের প্রমাণ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিই৷ এখানে কোনো ছাড় দেয়ার অবকাশ নেই৷''

তিনি জানান, ‘‘যারা অভিাযোগ করেন তারা যদি প্রমাণ ও তথ্য উপাত্তসহ অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ দোষ প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এই প্রক্রিয়া চলমান আছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ