1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে নতুন করে পুরান কথা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশ আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা দিয়েছে মিয়ানমারকে৷ কিন্তু একজনকেও ফেরত নেয়া হয়নি৷ অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘‘মিয়ানমার আগের চুক্তি অনুযায়ী এখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গাদেরকে নেওয়ার জন্য৷’’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com

তার এই দাবি কতটা বাস্তবানুগ?

বাংলাদেশে এখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৩ জন৷ ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং নির্যাতন থেকে বাঁচতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়৷ আরপর তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷আগে থেকেই চার লাখের মতো রোহিঙ্গা সেখানে ছিল৷ প্রতিবছর ২৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে বলে ইউএনএইচসিআর-এর ফ্যাক্ট শিট বলছে৷

২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করে৷ ২০১৯ সালে স্বল্প পরিসরে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন তুলে রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হননি৷ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চীনকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলেও ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা৷

এরপর চলতি বছরের মার্চে ৭০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার আগ্রহ দেখায় মিয়ারমার৷ এই তথ্য তখন সংবাদমাধ্যমকে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷ তবে তাতেও কোনো অগ্রগতির খবর ছিল না৷ শাহরিয়ার আলম তখন বলেন যে, বাংলাদেশ চায় প্রথম দফায় তারা এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিক৷

তবে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে ঢাকায় এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের রাষ্ট্রদূত কোনো সুখবর দিতে পারেননি৷সুখবর শুধু এটা যে তারা (মিয়ানমার সরকার) আগের চুক্তি অনুযায়ী এখনো এক পায়ে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গাদেরকে নেওয়ার জন্য৷’’

বাস্তব পরিস্থিতি কী?

বাস্তব পরিস্থিতি হলো বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত আগের চুক্তি অনুযায়ী আট লাখ ২৯ হাজার ৩৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা ‘ক্লিয়ারেন্সের জন্য’ মিয়ানমারকে দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ২৯ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের নাগরিক বলে এখন পর্যন্ত তারা নিশ্চিত বা স্বীকার করেছে৷ বাকিদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি৷ এখন পর্যন্ত একজনকেও ফেরত নেয়নি৷

সরকার যে চীনের সঙ্গে আলাপ করছে এটাই একমাত্র সুখবর: মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক

This browser does not support the audio element.

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত মার্চে মিয়ানমার ৭০০ জনের তালিকা পাঠিয়ে তাদের ফেরত নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে৷ কিন্তু তাতে সমস্যা হচ্ছে, অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে৷ তাই মন্ত্রণালয় এটার ওপর কাজ করছে৷ কাজ করতে গিয়ে দেখেছে এক হাজারের একটু বেশি হলে এর মধ্যে যারা যাবেন তাদের পরিবারের সবাইকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে৷ সেভাবে একটি প্রস্তাব মিয়ানমারকে পাঠানো হয়েছে৷ তবে এখনো কোনো জবাব মিয়ানমার দেয়নি৷ বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে৷

ওই সূত্র জানায়, এর বাইরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোরক বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই৷ এক প্রশ্নের জবাবে ওই সূত্র জানায়, ‘‘মিয়ানমার কখনোই বলেনি তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না৷ কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী আমরা যে তালিকা পাঠিয়েছি, তাদের মধ্যে তারাই নির্ধারণ করবে কারা তাদের নাগরিক৷ তারা যাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করবে, তাদের তো ফেরত নেবে না৷ আর এটা তারা ঠিকমতো করছে না৷ তাই রোহিঙ্গাদের যে তারা ফেরত নেবে এটা কোনো নতুন খবর নয়৷ বিষয় হলো তারা কতজনকে ফেরত নেবে, কবে ফেরত নেবে৷’’

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকার যে চীনের সঙ্গে আলাপ করছে, এটাই একমাত্র সুখবর৷ এর বাইরে তাদের যে শিগগিরই মিয়ানমার তাদের ফেরত নেবে এমন কোনো প্রক্রিয়া আমি আপাতত দেখছি না৷ আর কোনো সুখবর নেই৷’’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তা নতুন কোনো কথা নয়: হুমায়ুন কবির

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চীনা রাষ্ট্রদূতকে আরো একটি কথা বলেছেন যে, মিয়ানমার রাজি হয়েছে রোহিঙ্গাদের নেয়ার জন্য৷ এই শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এই প্রথম চীন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কিছু বললো৷ ভারত তো কিছুই বলে না৷ সেইদিক থেকে আমার ভালো লেগেছে৷ তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কোনো লক্ষণ আমি এখনো দেখছি না৷ আরেকটি ব্যাপার হলো উত্তর রাখাইনে যেখান থেকে অধিকাংশ রোহিঙ্গা এসেছে সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ভয়াবহ যুদ্ধ হচ্ছে৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পোস্টের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷ ফলে ওটাই তাদের এখন মাথা ব্যথা৷ রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের আপাপতত কোনো চিন্তা আছে বলে আমার মনে হয় না৷’’

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তা নতুন কোনো কথা নয়৷ মিয়ানমারের সাথে তো আমাদের চুক্তিই আছে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে৷ মূল বিষয় হলো ভ্যারিফিকেশন৷ সেখানেই তো তারা ঝামেলা করছে৷’’

তার কথা, ‘‘চীন যদি কিছু করতে পারে তা আমাদের খোলাখুলিভাবে বলুক৷ আমাদের সঙ্গে তো মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরনো কথা বলছেন৷ আমি এর মধ্যে আশার কিছু দেখছি না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ