1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারে ফেরার কথা বললেই বিপদ!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধ বাড়ছে৷ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক বছরে বিভিন্ন অপরাধে তার আগের চার বছরের সমান মামলা হয়েছে৷

মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পে নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়৷ সেখানে এখন কমপক্ষে আটটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে৷
মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পে নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়৷ সেখানে এখন কমপক্ষে আটটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে৷ছবি: DW/D. Cupolo

সম্প্রতি সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের (স্বেচ্ছাসেবক) হত্যাকাণ্ডের টার্গেটে পরিণত করছে৷

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে৷ গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়কেন্দ্রের ডি-ব্লকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামের সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন তিনি৷ তিনি ছিলেন ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান৷ তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন৷ তাকে হত্যার পর ফিরে যাওয়ার বিরোধী  গ্রুপগুলো শক্তি সঞ্চয় করেছে৷

এই হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়েছে কক্সবাজার আদালতে৷ কিন্তু ২৯ আসামির ১৪ জন এখনো পলাতক৷ মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে ক্যানাডায় আশ্রয় নিয়েছেন৷

এই হত্যাকাণ্ডের আসামিদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পে নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়৷ সেখানে এখন কমপক্ষে আটটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে৷ আর অপরাধ ঠেকাতে সক্রিয় আছেন মাঝিরা৷

অপরাধের পরিসংখ্যান

কক্সবাজার জেলা পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরনের অপরাধে মোট দুই হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে৷ এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন৷ এই পাঁচ বছরে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা এক হাজার ৬৩৬টি, ধর্ষণ মামলা ৮৮টি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায়ের চেষ্টার মামলা হয়েছে ৩৯টি৷ পাঁচ বছরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১১০টি৷ হত্যা মামলা হয়েছে ১০০টি৷ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি৷

হত্যা ছাড়া আরো যেসব অপরাধে মামলা হয়েছে তার মধ্যে আছে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি, মানব পাচারসহ ১২ ধরনের অপরাধ৷ এর মধ্যে গত আগস্ট পর্যন্ত মাত্র এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরনের অপরাধে মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪০টি৷ এই সময়ে অস্ত্র উদ্ধার ৯৮টি, মাদক উদ্ধার ৮৭৪টি, ধর্ষণ ২৩টি ও হত্যা মামলা হয়েছে ৩০টি৷

চার মাসে ১৫ খুন

গত চার মাসেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৫ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে৷ আর অধিকাংশ খুনের শিকার হয়েছেন ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছায় পাহারারত স্বেচ্ছাসেবক৷

আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর তথ্য মতে, ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ এরশাদ নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক খুন হন৷ ২১ সেপ্টেম্বর খুন হন মোহাম্মদ জাফর নামের এক নেতা৷ ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন আরেক স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ ইলিয়াস৷ ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতা, ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন৷ ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নেতা মারা যান৷ গত ২২ জুন কথিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ নেতা মোহাম্মদ শাহ এবং ১৫ জুন একই গ্রুপের সদস্য মো. সেলিম (৩০) গুলিতে নিহত হন৷  ৩ মে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানা উল্লাহ (৪০) ও সোনা আলী (৪৬)৷ পুলিশ জানায়, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারাই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে৷ এই স্বেচ্ছাসেবকরাই এখন সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন৷ তবে উখিয়া-টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের তিনটি ইউনিট নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে৷

কেন এই পরিস্থিতি?

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালি ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘‘ক্যাম্পগুলোতে এখন প্রধান চারটিসহ ৮-১০টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে৷ তাদের মধ্যে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ ও মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে ব্যাপক দ্বন্দ্ব রয়েছে৷ আবার রোহিঙ্গারা যে ত্রাণ পায়, তা কারা কিনে বাইরে বিক্রি করবে তা নিয়েও দ্বন্দ্ব প্রকট৷ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর এই গ্রুপগুলো আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে৷ তারা সবাই প্রত্যাবসনবিরোধী৷ কেউ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা বললেই তাদের হত্যার টার্গেট করে৷’’

কেউ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা বললেই তাদের হত্যার টার্গেট করে: গফুর উদ্দিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রুপগুলো ক্যাম্পের মধ্যেই অস্ত্র তৈরি করে, আবার বাইরে থেকেও আনে৷ তাদের সাথে মিয়ানমারে মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালান গ্রুপের যোগাযোগ আছে৷ আর আছে কিছু স্থানীয় লোক৷’’

ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেই মাঝি নামে স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ তৈরি করেছে৷ তারা পাহারা দেয়৷ এখন তারা ওই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর টার্গেটে পরিণত হয়েছে৷ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের বাংলাদেশের দালাল বলে হত্যা করছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের স্থানীয়রা এখন ভয় আর আতঙ্কে আছেন৷ তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা ক্যাম্পের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ আমি মনে করি, ক্যাম্পের দায়িত্ব থেকে দেশি বিদেশি এনজিওগুলোকে সরিয়ে দিয়ে পুরোটাই বাংলাদেশ সরকারের হাতে নেয়া উচিত৷ সেটা করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷’’

মিয়ানমার সরকারের সমর্থক কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ক্যাম্পে সক্রিয় আছে: ইউনূস আরমান

This browser does not support the audio element.

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মুখপাত্র ইউনূস আরমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ক্যাম্পের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও মিয়ানমার সরকারের সমর্থক কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ক্যাম্পে সক্রিয় আছে৷ আরো কয়েকটি গ্রুপ আছে৷ তারাই ক্যাম্পে হত্যাসহ নানা অপরাধে যুক্ত৷ তাদের নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব আছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মাঝিরা ক্যাম্পে মূলত নাইট গার্ডের কাজ করেন৷ রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকেই ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য তারা দায়িত্ব পালন করছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে তারা হত্যার শিকার হচ্ছেন৷ সন্ত্রাসীরা হয়ত মাঝিদের তাদের অপকর্মের পথে বাধা মনে করছে৷ তাদের যখন টার্গেট করে হত্যা করা হয় তখন আসলে পুলিশের কিছু করার থাকে না৷’’

ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের ৬-৭টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে: সৈয়দ হারুন অর রশীদ

This browser does not support the audio element.

‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন এপিবিএন-এর সদস্যরা৷ ১৪ এপিবিএন-এর কমান্ডার সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে ক্যাম্পের পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছিল৷ তবে এখন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আছে৷’’

তিনি জানান, ‘‘ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের ৬-৭টি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে৷ তারা মূলত মাদক ও অপহরণ বাণিজ্যে জড়িত৷ আর সেটা করতে গিয়ে তারা ক্যাম্পে আধিপত্য স্থাপনের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে৷ আমরা চেষ্টা করছি তাদের আইনের আওতায় আনতে৷’’

মাঝিদের হত্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘মাঝিদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে সেটা ওভাবে বলা যাবে না৷ তবে কোনো মাঝি যদি গোপনে কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকে, তারা টার্গেটে পরিণত হচ্ছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ