1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য কি মেয়েদের ভোট পাবেন মমতা?

গৌতম হোড় | স্যমন্তক ঘোষ
৫ মে ২০২৪

লোকসভাতেও কি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বড় প্রভাব ফেলবে? মেয়েদের ভোট কি এজন্য তণমূলের দিকে ঝুঁকে থাকবে?

কলকাতার দমদমে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার  নিয়ে তৃণমূলের দেওয়াল-লেখা।।
তৃণমূলের দেওয়াল-লেখাতে অত্যন্ত প্রাধান্য পাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। ছবি: Subrata Goswami/DW

কথাটা বলেছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের জামাল। জঙ্গিপুরের বাসিন্দা। কলকাতা থেকে বহরমপুর যাওয়ার ট্রেনে পাশে বসা জামালকে ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ''আমি আর যাই হোক তৃণমূলকে ভোট দেব না। নিয়োগ-দুর্নীতির অবস্থাটা দেখেছেন। তারপর আমি জো়ড়াফুলকে বেছে নেব না।'' এরপরেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে একটি বিধিসম্মত সতর্কীকরণ, ''বাড়ির মেয়েদের কথা বলতে পারছি না। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাওয়ার পর থেকে তারা সবাই তৃণমূলে ভোট দিচ্ছে। আমার কথাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।''

লোকসভা ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকার পরিমাণ প্রতি মাসে পাঁচশ থেকে বাড়িয়ে হাজার টাকা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলিত ও জনজাতিরা পাচ্ছেন এক হাজার দুইশ টাকা করে।  প্রতি মাসে পাঁচশ টাকা পেয়েই বিধানসভায় নারীদের ভোট ঢালাওভাবে পেয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এখন তারা দ্বিগুণ টাকা পাচ্ছেন।  তাহলে লোকসভাতেও কি ছবিটা একই থাকবে?

শুধু জামাল নয়, মুর্শিদাবাদ ও মালদহে প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, লক্ষ্ণীর ভান্ডারের জন্য নারীদের ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই হেলে থাকবে। মালদহের ছবি মণ্ডল, মুর্শিদাবাদের খালিদা বিবি, বহরমপুরের সুরবালা বিশ্বাসরা জানিয়েছেন, লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়ায় তারা আপ্লুত। সে জন্য মুক্তকণ্ঠে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তারা। পরিবারে দুইজন বা তিনজন নারী থাকলে মাসে দুই বা তিন হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে চলে আসছে। ফলে তাদের অনেকেই অন্য কোনোদিকে তাকাবার কথা ভাবছেন না।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে তৃঁংূলের দেওয়াল-লেখা। ছবি: Subrata Goswami/DW

তৃণমূলও পশ্চিমবঙ্গের প্রচারে বারবার নিয়ে আসছে লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গ। ইন্দাসে তৃণমূলের প্রচারে দেখা গেছে মা লক্ষ্মীর বেশে নারীদের। বহরমপুরে বেশ কয়েকজন নারী লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার প্রকল্পে পাওয়া এক হাজার টাকা তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের হাতে তুলে দিয়েছেন। সেই টাকা হাতে নিয়ে ইউসুফ পাঠান কেঁদে ফেলেছেন। সেই ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারের মডেল হাতে তৃণমূলের সমর্থক নারীরা প্রচার করেছেন। দেওয়াল-লেখায় উঠে এসেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। ভোট শুরু আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে সামনে রেখে ভোট দিন।

সবমিলিয়ে তৃণমূলের প্রচার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারময় বললেও অত্যুক্তি হবে না।

বিজেপি অবশ্য প্রচারে জোর দিচ্ছে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাগুলিতেও বেশি করে মেয়েদের নিয়ে আসার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি জানে, বিধানসভায় লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারের কারণে মেয়েদের ভোট তৃণমূল পেয়েছে।  লোকসভাতেও যদি একই প্রবণতা বজায় থাকে, তাহলে তাদের আসন কমতে পারে। 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলছিলেন, ''চাকরি না থাকা, নিয়োগ-দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, শেখ শাহজাহানের মতো যাবতীয় অভিযোগকে পিছনে ফেলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি নারীরা টাকাটা হাতে পাচ্ছেন। ৬০-এর উপরে আছে বয়স্ক পেনশন। ২৫-এর কম বয়সিদের জন্য আছে কন্যাশ্রী। ফলে মেয়েদের ভোটের সিংহভাগ তৃণমূলেই পড়া উচিত।''

ঘটনা হলো, ভোটের রাজনীতিতে এখন দুই হাত খুলে মানুষকে দেয়ার প্রথা ক্রমশ প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বছরে তিন কিস্তিতে ছয় হাজার টাকা দেয়া শুরু করেন।  তার ফলে দেশজুড়ে  কৃযকদের ঢালাও ভোট পেতে বিজেপি-র অসুবিধা হয়নি।  সমাজবাদী পার্টি তো ক্ষমতায় এসে পড়ুয়াদের ল্যাপটপ দিয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসাবে টিভি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।

বাম-কংগ্রেস জোট পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে?

11:03

This browser does not support the video element.

এই প্রতিশ্রুতি ঠিক না ভুল, এর ফলে অর্থনীতিতে কতটা চাপ পড়ে, কোনো কাজ না করে এভাবে টাকা পাওয়ার ফল কী হতে পারে, সেসব প্রশ্নের মধ্যে যাচ্ছি না, এখানে শুধু এইটুকুই বলার, এই জনমোহিনী প্রতিশ্রুতিকে কোনো রাজনৈতিক দলই উপেক্ষা করতে পারছে না। বামেরাও নয়। যাদবপুরে লড়ছেন সিপিএমের যুব নেতা সৃজন। তিনি ইতিমধ্যেই প্রকল্পের নাম না করে বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে কোনো প্রকল্পই বাদ যাবে না। সব প্রকল্পে টাকা দ্বিগুণ হবে। যারা এখন হাজার টাকা পাচ্ছেন, তারা দুই হাজার টাকা পাবেন। বোঝা যাচ্ছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে কেউই উপেক্ষা করতে পারছেন না।

সবশেষে একটা ছোট তথ্য, পশ্চিমবঙ্গে দুই দফায় ভোট হয়েছে। দুইটি দফাতেই, ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন। দ্বিতীয় পর্বে তো ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ভোট দেয়ার হার প্রায় আড়াই শতাংশ বেশি।  এর পিছনেও কি কাজ করছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার?

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ